ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের সঠিক নিয়ম

 

ভোটার আইডি কার্ড বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়পত্র। এটি নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কার্যক্রমে প্রয়োজন হয়।

তবে অনেক সময় ভোটার আইডি কার্ডে বিভিন্ন তথ্যগত ভুল থাকতে পারে, যা সংশোধন করা জরুরি। ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। নিচে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত নিয়মাবলী দেওয়া হলো।

পোস্ট সূচীপত্রঃ  ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন সম্পর্কে

১. ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের আবেদন 

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট বা সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে নির্ধারিত ফরম সংগ্রহ করতে হয়।

একজন নাগরিক যদি তার নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ, ছবি বা অন্য কোনো তথ্য সংশোধন করতে চান, তবে তাকে সংশ্লিষ্ট সংশোধন ফরমটি সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। ফরম পূরণের সময় যথাযথ তথ্য প্রদান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে পরবর্তী সময়ে কোনো জটিলতা না সৃষ্টি হয়।

আবেদনকারীর অবশ্যই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হবে, যেমন- সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় দলিল (জন্মনিবন্ধন সনদ, শিক্ষা সনদ, নাগরিকত্ব সনদ ইত্যাদি)। এসব কাগজপত্র নির্বাচন অফিসে জমা দেওয়ার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশোধনের কাজ সম্পন্ন হয়।

২. সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ভোটার আইডি সংশোধনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হয়, যা সংশোধনের ধরন অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে।

যদি নাম সংশোধন করতে হয়, তাহলে জন্মনিবন্ধন সনদ, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ বা আদালতের ডিক্রি প্রয়োজন হতে পারে। অন্যদিকে, যদি জন্মতারিখ সংশোধন করতে হয়, তাহলে জন্মনিবন্ধন সনদ, এসএসসি বা সমমানের সনদপত্র জমা দিতে হবে।

ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য নাগরিকত্ব সনদ, বিদ্যুৎ বা পানির বিলের কপি বা বাড়ির মালিকের প্রত্যয়নপত্র প্রয়োজন হতে পারে। এ ছাড়া, ছবি পরিবর্তনের জন্য পুরোনো ভোটার আইডি কার্ড এবং নতুন ছবি জমা দিতে হয়।

৩. সংশোধন ফি ও সময়সীমা

ভোটার আইডি সংশোধনের জন্য নির্দিষ্ট ফি নির্ধারিত আছে, যা সংশোধনের ধরন অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে।

সাধারণত, ছোটখাটো সংশোধনের জন্য কম ফি নির্ধারিত থাকে, তবে যদি বড় ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন হয় (যেমন- পুরো নাম বা জন্মতারিখ পরিবর্তন), তাহলে ফি তুলনামূলক বেশি হতে পারে। সংশোধনের জন্য আবেদন জমা দেওয়ার পর নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশোধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়, যা সাধারণত দুই থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত সময় নিতে পারে।

অনেক সময় অতিরিক্ত চাপের কারণে সময় কিছুটা বেশি লাগতে পারে, তাই আবেদনকারীকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হতে পারে। নির্দিষ্ট সময়ের পর সংশোধিত ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহ করা যায়।

আরো পড়ুন: ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন সম্পর্কে

৪. অনলাইনে ভোটার আইডি সংশোধনের পদ্ধতি

বর্তমানে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অনলাইনের মাধ্যমে ভোটার আইডি সংশোধনের সুযোগ দিয়েছে, যা সময় ও ঝামেলা কমানোর জন্য একটি আধুনিক পদ্ধতি।

অনলাইনে সংশোধনের জন্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে সংশোধন ফরম পূরণ করতে হয়। এর পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্ক্যান করে আপলোড করতে হয়। আবেদন জমা দেওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিসে গিয়ে কাগজপত্রের মূল কপি দেখিয়ে নিশ্চিত করতে হয়।

এই পদ্ধতির ফলে ঘরে বসেই সংশোধনের কাজ শুরু করা যায় এবং প্রয়োজনীয় তথ্য আপডেট করা সহজ হয়। তবে অনলাইনে আবেদন করার পরও কিছুক্ষেত্রে শারীরিকভাবে অফিসে উপস্থিত হয়ে যাচাই করাতে হতে পারে।

৫. সংশোধন পদ্ধতিতে সাধারণ সমস্যাগুলো

অনেক সময় ভোটার আইডি সংশোধনের সময় কিছু সাধারণ সমস্যা দেখা দেয়, যা আবেদনকারীদের অসুবিধায় ফেলে।

উদাহরণস্বরূপ, যদি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা না দেওয়া হয় বা ভুল তথ্য দেওয়া হয়, তাহলে সংশোধনের আবেদন বাতিল হতে পারে। এ ছাড়া, অফিসের কাজের চাপ বেশি থাকলে সময়মতো সংশোধিত কার্ড পাওয়া যায় না।

কখনো কখনো আবেদনকারীর তথ্য যাচাই করতে সমস্যা হতে পারে, বিশেষ করে যদি জমা দেওয়া তথ্য ও নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেসের তথ্যের মধ্যে পার্থক্য থাকে। তাই সব সময় নির্ভুল ও প্রামাণ্য তথ্য প্রদান করা উচিত।

৬. সংশোধনের পর নতুন কার্ড সংগ্রহ

ভোটার আইডি সংশোধনের পর নতুন কার্ড সংগ্রহের জন্য সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিস থেকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যোগাযোগ করতে হয়।

সংশোধিত কার্ড সংগ্রহের জন্য পুরোনো কার্ড ও সংশোধনের রশিদ সঙ্গে নিয়ে যেতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে সংশোধিত কার্ড ডাকযোগে বাড়িতে পাঠানো হয়, তবে এটি নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট অফিসের নীতির ওপর।

যদি কোনো কারণে সংশোধনের পরেও ভুল থেকে যায়, তাহলে পুনরায় আবেদন করতে হয়। তাই প্রথমবারেই সঠিকভাবে ফরম পূরণ করা এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া জরুরি।

লেখক এর মতামত

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যা সঠিক নিয়ম মেনে করতে হয়। যথাযথ কাগজপত্র ও তথ্য প্রদান করে সংশোধন করলে ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হবে না। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুসরণ করে এবং সময়মতো সংশোধন আবেদন করলে সহজেই সংশোধিত ভোটার আইডি কার্ড পাওয়া সম্ভব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ইনফো লাগবের নীতিমালা জেনে কমেন্ট করুন । প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়। ;

comment url