শীতকালে হাতে পায়ের চামড়া উঠে যায় কেন ?
শীতকালে হাতে-পায়ের চামড়া উঠে যাওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। শুষ্ক ও ঠান্ডা আবহাওয়া,
আর্দ্রতার অভাব, এবং জীবনধারার কিছু অভ্যাস এর জন্য দায়ী হতে পারে।
নিচে ১০টি কারণ বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হলো:
- শুষ্ক আবহাওয়া
- অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার
- আর্দ্রতা রক্ষাকারী ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজারের অভাব
- পর্যাপ্ত পানি পান না করা
- ঠান্ডা ও শুষ্ক বাতাসের সংস্পর্শে বেশি থাকা
- পুষ্টির অভাব (ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতি)
- অতিরিক্ত সাবান ও হার্শ কেমিক্যাল ব্যবহার
- ত্বকের রোগ (একজিমা, সোরিয়াসিস)
- সঠিক পোশাক না পরা
- অতিরিক্ত ঘর্ষণ ও স্ক্রাবিং করা
১. শুষ্ক আবহাওয়া
শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়, ফলে ত্বক দ্রুত শুষ্ক হয়ে যায়। শুষ্ক ত্বকের কারণে চামড়া ময়েশ্চার হারিয়ে ফেলে এবং খসখসে হয়ে ওঠে, যা পরবর্তীতে উঠে যেতে শুরু করে।এছাড়া, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম থাকার ফলে ত্বকের উপরিভাগ থেকে প্রাকৃতিক তেলও দ্রুত হারিয়ে যায়। এর ফলে ত্বক ফেটে যেতে পারে, এবং ধীরে ধীরে মৃত চামড়া খসে পড়তে থাকে।
২. অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার
শীতকালে অনেকে গরম পানিতে হাত-মুখ ধুতে বা গোসল করতে পছন্দ করেন। গরম পানি ত্বকের প্রাকৃতিক তেল ধুয়ে ফেলে, ফলে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে পড়ে।নিয়মিত গরম পানিতে হাত-পা ধোয়ার কারণে ত্বকের সুরক্ষাকারী লিপিড স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যায় এবং সহজেই চামড়া উঠতে শুরু করে।
৩. আর্দ্রতা রক্ষাকারী ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজারের অভাব
অনেকে শীতকালে ত্বকের যত্ন নিতে ভুলে যান, বিশেষ করে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করলে চামড়া আরও বেশি শুষ্ক হয়ে যায়। এটি ত্বকের উপরিভাগ ফেটে যাওয়ার অন্যতম কারণ।ত্বক স্বাভাবিকভাবেই কিছু পরিমাণে তেল উৎপাদন করে, যা শীতে কমে যেতে পারে। তাই ময়েশ্চারাইজার না ব্যবহার করলে ত্বক আর্দ্রতা হারায় এবং সহজেই খসখসে হয়ে চামড়া উঠতে পারে।
৪. পর্যাপ্ত পানি পান না করা
শীতে অনেকেই কম পানি পান করেন, কারণ শরীরের তৃষ্ণা কম অনুভূত হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত পানি না খেলে শরীরের ভিতর থেকে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।ত্বকের আর্দ্রতা শুধুমাত্র বাইরের যত্নের উপর নির্ভর করে না, বরং শরীরের হাইড্রেশনও গুরুত্বপূর্ণ। কম পানি পান করলে ত্বকের নমনীয়তা কমে যায় এবং খসখসে হয়ে যায়, যা চামড়া উঠার কারণ হতে পারে।
৫. ঠান্ডা ও শুষ্ক বাতাসের সংস্পর্শে বেশি থাকা
যারা শীতকালে বাইরে বেশি সময় কাটান, বিশেষ করে খোলা বাতাসে কাজ করেন, তাদের ত্বক ঠান্ডা বাতাসের কারণে দ্রুত শুষ্ক হয়ে যায়।শীতের বাতাস ত্বকের উপরিভাগের আর্দ্রতা দ্রুত শোষণ করে ফেলে। এতে ত্বক ফেটে যেতে পারে এবং চামড়া উঠে যাওয়া শুরু করে।
৬. পুষ্টির অভাব (ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতি)
ভিটামিন এ, সি, ই এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাব হলে ত্বকের সুরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে চামড়া ওঠার প্রবণতা বাড়ে।এছাড়া, আয়রন ও জিঙ্কের অভাব থাকলে ত্বকের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। ফলে ত্বক মসৃণতা হারায় এবং মৃত চামড়া সহজেই খসে পড়ে।
৭. অতিরিক্ত সাবান ও হার্শ কেমিক্যাল ব্যবহার
অনেক সাবান ও ক্লিনজারে সালফেট ও অ্যালকোহল থাকে, যা ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা কেড়ে নেয়। নিয়মিত এ ধরনের পণ্য ব্যবহার করলে ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায়।এছাড়া, শীতকালে এন্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান বা হার্শ স্ক্রাব ব্যবহার করলে ত্বকের প্রতিরক্ষামূলক স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং চামড়া উঠতে পারে।
৮. ত্বকের রোগ (একজিমা, সোরিয়াসিস)
যাদের ত্বকের সমস্যা যেমন একজিমা বা সোরিয়াসিস রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে শীতকালে চামড়া ওঠার প্রবণতা আরও বেশি থাকে। শীতল আবহাওয়া এই রোগগুলোর উপসর্গকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে।একজিমা ও সোরিয়াসিসের ক্ষেত্রে ত্বকে অতিরিক্ত শুষ্কতা তৈরি হয়, ফলে ত্বক ফাটতে শুরু করে। এতে চুলকানি, লালচে ভাব এবং খসখসে চামড়া পড়তে পারে।
৯. সঠিক পোশাক না পরা
শীতকালে যদি পর্যাপ্ত গরম পোশাক না পরা হয়, বিশেষ করে উলের পোশাকের নিচে তুলতুলে কটনের স্তর না থাকে, তাহলে ত্বক ঠান্ডার সংস্পর্শে এসে শুষ্ক হয়ে পড়ে।উলের বা সিন্থেটিক পোশাক সরাসরি ত্বকের সাথে লাগলে অনেকের ত্বকে সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যা চুলকানি ও চামড়া ওঠার কারণ হতে পারে।
১০. অতিরিক্ত ঘর্ষণ ও স্ক্রাবিং করা
অনেকে শীতকালে ত্বক এক্সফোলিয়েট করতে গিয়ে অতিরিক্ত স্ক্রাবিং করেন, যা ত্বকের প্রাকৃতিক তেল দূর করে দেয়। এতে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে পড়ে এবং চামড়া ওঠার প্রবণতা বেড়ে যায়।শীতকালে অতিরিক্ত স্ক্রাব করলে নতুন ত্বক সঠিকভাবে তৈরি হতে পারে না। এর ফলে মৃত চামড়া উঠতে শুরু করে এবং ত্বক আরও বেশি রুক্ষ দেখায়।
ইনফো লাগবের নীতিমালা জেনে কমেন্ট করুন । প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়। ;
comment url