তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ইন্টারনেট, কম্পিউটার, মোবাইল প্রযুক্তি, ক্লাউড কম্পিউটিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ইন্টারনেট বিশ্বব্যাপী তথ্য আদান-প্রদান ও যোগাযোগ
সূচীপত্র
- ইন্টারনেট: বিশ্বব্যাপী সংযোগের মাধ্যম
- কম্পিউটার: তথ্য প্রক্রিয়াকরণের কেন্দ্র
- মোবাইল প্রযুক্তি: যোগাযোগের নতুন দিগন্ত
- ক্লাউড কম্পিউটিং: তথ্য সংরক্ষণের আধুনিক সমাধান
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: সিদ্ধান্ত গ্রহণের সহায়ক
- সফটওয়্যার: ডিজিটাল জগতের মূল চালিকাশক্তি
- নেটওয়ার্কিং: তথ্য আদান-প্রদানের পথ
- সাইবার নিরাপত্তা: ডিজিটাল জগতের সুরক্ষা
- ইন্টারনেট অব থিংস: সংযুক্ত ডিভাইসের জগৎ
- ব্লকচেইন: নিরাপদ লেনদেনের প্রযুক্তি
- উপসংহার
ইন্টারনেট: বিশ্বব্যাপী সংযোগের মাধ্যম
ইন্টারনেট আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারগুলোর একটি। এটি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ, প্রতিষ্ঠান এবং ডিভাইসগুলোকে একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংযুক্ত করেছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান, যোগাযোগ এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম অত্যন্ত দ্রুত এবং সহজ হয়েছে। এটি শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদন এবং গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা ভিডিও কলের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে বসে মুহূর্তের মধ্যে কথা বলতে পারি। এছাড়া, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো ইন্টারনেটের সাহায্যে বিশ্বব্যাপী ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তবে, ইন্টারনেটের অপব্যবহার, যেমন সাইবার অপরাধ এবং গোপনীয়তা লঙ্ঘন, এটির সুবিধার পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছে।
ইন্টারনেটের প্রভাব শুধু ব্যক্তিগত জীবনেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি সমাজ, অর্থনীতি এবং রাজনীতির ক্ষেত্রেও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, যেমন ফেসবুক, টুইটার এবং ইনস্টাগ্রাম, ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষের মতামত প্রকাশ ও তথ্য শেয়ারের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এছাড়া, ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং এবং রিমোট কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা বিশ্বের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তবে, ইন্টারনেটের অতিরিক্ত ব্যবহার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার এবং সচেতনতা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
কম্পিউটার: তথ্য প্রক্রিয়াকরণের কেন্দ্র
কম্পিউটার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মূল ভিত্তি। এটি তথ্য প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ এবং বিশ্লেষণের জন্য অপরিহার্য একটি যন্ত্র। কম্পিউটার ব্যবহার করে আমরা জটিল হিসাব, ডাটা বিশ্লেষণ এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের মতো কাজ সহজেই করতে পারি। বর্তমানে কম্পিউটার শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রকৌশল এবং বিনোদনের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, হাসপাতালে রোগীর তথ্য সংরক্ষণ এবং বিশ্লেষণের জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। এছাড়া, গেমিং এবং গ্রাফিক ডিজাইনের ক্ষেত্রে উন্নত কম্পিউটার সিস্টেম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, কম্পিউটারের নির্ভরশীলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে এর নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
কম্পিউটার প্রযুক্তির অগ্রগতি আমাদের জীবনকে আরও সহজ করেছে। আধুনিক কম্পিউটারগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিংয়ের মতো উন্নত প্রযুক্তির সাথে সমন্বিত হয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এছাড়া, কম্পিউটারের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সাথে সংযোগ স্থাপন করে আমরা বিশ্বের যেকোনো তথ্য মুহূর্তের মধ্যে পেতে পারি। তবে, কম্পিউটারের অতিরিক্ত ব্যবহার চোখের সমস্যা এবং শারীরিক অসুস্থতার কারণ হতে পারে। এছাড়া, হ্যাকিং এবং ম্যালওয়্যারের মতো সমস্যা কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের জন্য বড় হুমকি। তাই কম্পিউটার ব্যবহারে সঠিক জ্ঞান এবং সতর্কতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মোবাইল প্রযুক্তি: যোগাযোগের নতুন দিগন্ত
মোবাইল প্রযুক্তি আধুনিক যোগাযোগের একটি বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটের মাধ্যমে আমরা যেকোনো সময়, যেকোনো স্থান থেকে যোগাযোগ করতে পারি। মোবাইল প্রযুক্তি শুধু কথা বলা বা মেসেজ পাঠানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি ইন্টারনেট ব্রাউজিং, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার এবং অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করার সুযোগ দেয়। উদাহরণস্বরূপ, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমরা ঘরে বসে আর্থিক লেনদেন করতে পারি। এছাড়া, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন শিক্ষা এবং বিনোদনের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। তবে, মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার সামাজিক সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
মোবাইল প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে। 5G প্রযুক্তির আগমনের সাথে ইন্টারনেটের গতি এবং সংযোগের মান আরও উন্নত হয়েছে। এছাড়া, মোবাইল ডিভাইসগুলো এখন ক্যামেরা, জিপিএস এবং বিভিন্ন সেন্সরের মাধ্যমে আমাদের দৈনন্দিন কাজে সহায়তা করছে। তবে, মোবাইল প্রযুক্তির উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা গোপনীয়তা এবಂ নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মোবাইল হ্যাকিং এবং ডাটা চুরির ঘটনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই মোবাইল ব্যবহারে সচেতনতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
ক্লাউড কম্পিউটিং: তথ্য সংরক্ষণের আধুনিক সমাধান
ক্লাউড কম্পিউটিং তথ্য সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াকরণের একটি আধুনিক পদ্ধতি। এটি ব্যবহারকারীদের শারীরিক হার্ডওয়্যারের প্রয়োজন ছাড়াই ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষণ এবং অ্যাক্সেস করার সুযোগ দেয়। গুগল ড্রাইভ, ড্রপবক্স এবং মাইক্রোসফট ওয়ানড্রাইভের মতো ক্লাউড সার্ভিসগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহার করে তাদের ডাটা ব্যাকআপ এবং স্কেলেবল সলিউশন পাচ্ছে। ক্লাউড কম্পিউটিং খরচ কমায় এবং তথ্যের নিরাপত্তা বাড়ায়। তবে, ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়া ক্লাউড সার্ভিস অ্যাক্সেস করা সম্ভব নয়।
ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের আরেকটি বড় সুবিধা হলো এটি সহযোগিতামূলক কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে। একাধিক ব্যবহারকারী একই সময়ে ক্লাউডে সংরক্ষিত ফাইলের উপর কাজ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, গুগল ডক্সের মাধ্যমে একটি দল রিয়েল-টাইমে ডকুমেন্ট এডিট করতে পারে। এছাড়া, ক্লাউড কম্পিউটিং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং বিগ ডাটা বিশ্লেষণের জন্যও ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে, ক্লাউডে তথ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা নিয়ে কিছু উদ্বেগ রয়েছে। তাই শক্তিশালী পাসওয়ার্ড এবং এনক্রিপশন ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: সিদ্ধান্ত গ্রহণের সহায়ক
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) আধুনিক প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি মানুষের মতো চিন্তা করার এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা প্রদান করে। AI ব্যবহার করে আমরা জটিল ডাটা বিশ্লেষণ, ভবিষ্যদ্বাণী এবং স্বয়ংক্রিয় কাজ সম্পন্ন করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, সিরি এবং গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টের মতো ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট আমাদের দৈনন্দিন কাজে সহায়তা করে। এছাড়া, চিকিৎসা ক্ষেত্রে AI রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা পরিকল্পনায় ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে, AI-এর অপব্যবহার এবং নৈতিক প্রশ্নগুলো এর ব্যবহারে চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
AI-এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এটি শিল্প ও ব্যবসায়ে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। উদাহরণস্বরূপ, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো AI ব্যবহার করে গ্রাহকদের পছন্দ অনুযায়ী পণ্য সুপারিশ করে। এছাড়া, স্বয়ংচালিত গাড়ি এবং রোবটিক্সে AI-এর ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে, AI-এর উন্নয়ন এবং ব্যবহারে স্বচ্ছতা এবং নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া, AI-এর কারণে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জও দেখা দিয়েছে। তাই AI-এর সঠিক ব্যবহার এবং নীতিমালা প্রণয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সফটওয়্যার: ডিজিটাল জগতের মূল চালিকাশক্তি
সফটওয়্যার হলো কম্পিউটার এবং অন্যান্য ডিভাইস চালানোর মূল শক্তি। এটি নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রোগ্রাম এবং নির্দেশাবলীর একটি সেট। অপারেটিং সিস্টেম, যেমন উইন্ডোজ এবং ম্যাকওএস, এবং অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার, যেমন মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এবং ফটোশপ, আমাদের দৈনন্দিন কাজে সহায়তা করে। সফটওয়্যার ব্যবহার করে আমরা ডাটা ম্যানেজমেন্ট, গ্রাফিক ডিজাইন এবং গেমিংয়ের মতো কাজ করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার ব্যবসায়িক হিসাব-নিকাশ সহজ করে। তবে, সফটওয়্যারের নিরাপত্তা এবং আপডেটের বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি।
সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এখন একটি বিশাল শিল্প। ওপেন-সোর্স সফটওয়্যার, যেমন লিনাক্স এবং ফায়ারফক্স, বিনামূল্যে ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে। এছাড়া, মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট স্মার্টফোনের জনপ্রিয়তার সাথে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, সফটওয়্যারের জটিলতা এবং বাগ সমস্যা ব্যবহারকারীদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। এছাড়া, পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ায়। তাই লাইসেন্সকৃত এবং নির্ভরযোগ্য সফটওয়্যার ব্যবহার করা উচিত।
নেটওয়ার্কিং: তথ্য আদান-প্রদানের পথ
নেটওয়ার্কিং হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মেরুদণ্ড। এটি বিভিন্ন ডিভাইসের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের জন্য একটি সিস্টেম। লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (LAN) এবং ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (WAN) এর মাধ্যমে আমরা ডাটা শেয়ার করতে পারি। নেটওয়ার্কিং ব্যবহার করে ইন্টারনেট, ইন্ট্রানেট এবং ভিপিএন সার্ভিস চলে। উদাহরণস্বরূপ, অফিসে ফাইল শেয়ারিং এবং প্রিন্টিংয়ের জন্য নেটওয়ার্কিং ব্যবহৃত হয়। তবে, নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা না থাকলে হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি থাকে।
আধুনিক নেটওয়ার্কিং প্রযুক্তি, যেমন ফাইবার অপটিক্স এবং 5G, তথ্য স্থানান্তরের গতি বাড়িয়েছে। এছাড়া, ওয়াই-ফাই প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে আরও সুবিধাজনক করেছে। তবে, নেটওয়ার্কের জটিলতা এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য চ্যালেঞ্জ। এছাড়া, নেটওয়ার্কের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা সিস্টেম ব্যর্থতার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই নির্ভরযোগ্য নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা প্রোটোকল গ্রহণ করা জরুরি।
সাইবার নিরাপত্তা: ডিজিটাল জগতের সুরক্ষা
সাইবার নিরাপত্তা ডিজিটাল জগতের তথ্য এবং সিস্টেমকে সুরক্ষিত রাখার একটি প্রক্রিয়া। হ্যাকিং, ফিশিং এবং ম্যালওয়্যারের মতো হুমকি থেকে রক্ষা করতে সাইবার নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফায়ারওয়াল, অ্যান্টিভাইরাস এবং এনক্রিপশনের মতো প্রযুক্তি সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। উদাহরণস্বরূপ, অনলাইন ব্যাংকিংয়ে দুই-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখে। তবে, সাইবার অপরাধীরা ক্রমশ উন্নত কৌশল ব্যবহার করছে, যা নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য চ্যালেঞ্জ।
সাইবার নিরাপত্তার গুরুত্ব ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান উভয়ের জন্যই অপরিসীম। সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সাইবার নিরাপত্তায় বিনিয়োগ করছে। এছাড়া, সাধারণ মানুষের মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তবে, দুর্বল পাসওয়ার্ড এবং অসচেতনতার কারণে অনেকেই সাইবার হামলার শিকার হচ্ছে। তাই নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট এবং নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
ইন্টারনেট অব থিংস: সংযুক্ত ডিভাইসের জগৎ
ইন্টারনেট অব থিংস (IoT) এমন একটি প্রযুক্তি, যা বিভিন্ন ডিভাইসকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত করে। স্মার্ট হোম, স্মার্ট সিটি এবং স্মার্ট ইন্ডাস্ট্রিতে IoT ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্মার্ট সিকিউরিটি সিস্টেম বাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। IoT তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নত করে। তবে, IoT ডিভাইসের নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
IoT-এর ব্যবহার চিকিৎসা এবং কৃষি ক্ষেত্রেও ব্যাপক। উদাহরণস্বরূপ, স্মার্ট হেলথ মনিটরিং ডিভাইস রোগীর স্বাস্থ্য তথ্য রিয়েল-টাইমে ডাক্তারের কাছে পাঠায়। এছাড়া, কৃষিতে IoT সেন্সর মাটির আর্দ্রতা এবং আবহাওয়ার তথ্য সরবরাহ করে। তবে, IoT ডিভাইসের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে নেটওয়ার্ক জটিলতা এবং শক্তি খরচ বাড়ছে। তাই IoT-এর জন্য শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং দক্ষ নেটওয়ার্ক প্রয়োজন।
ব্লকচেইন: নিরাপদ লেনদেনের প্রযুক্তি
ব্লকচেইন একটি বিকেন্দ্রীকৃত এবং নিরাপদ ডাটাবেস প্রযুক্তি। এটি ক্রিপ্টোকারেন্সি, যেমন বিটকয়েন এবং ইথেরিয়াম, এর মূল ভিত্তি। ব্লকচেইন তথ্যকে ব্লক আকারে সংরক্ষণ করে এবং এটি পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব। এটি আর্থিক লেনদেন, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট এবং চুক্তি ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ব্লকচেইন ব্যবহার করে পণ্যের উৎস এবং গুণগত মান যাচাই করা যায়। তবে, ব্লকচেইনের জটিলতা এবং শক্তি খরচ এর ব্যবহারে চ্যালেঞ্জ।
ব্লকচেইনের স্বচ্ছতা এবং নিরাপত্তা এটিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে জনপ্রিয় করেছে। স্বাস্থ্যসেবায় রোগীর তথ্য সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষণের জন্য ব্লকচেইন ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া, ভোটিং সিস্টেমে ব্লকচেইন জালিয়াতি রোধ করতে পারে। তবে, ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যাপক গ্রহণের জন্য আইনি এবং প্রযুক্তিগত প্রতিবন্ধকতা দূর করা প্রয়োজন। তাই ব্লকচেইনের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সঠিক পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগ জরুরি।
উপসংহার
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আধুনিক বিশ্বের প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। ইন্টারনেট, কম্পিউটার, মোবাইল প্রযুক্তি, ক্লাউড কম্পিউটিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সফটওয়্যার, নেটওয়ার্কিং, সাইবার নিরাপত্তা, ইন্টারনেট অব থিংস এবং ব্লকচেইন আমাদের জীবনকে আরও সহজ, দ্রুত এবং নিরাপদ করেছে। এই প্রযুক্তিগুলো শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা এবং বিনোদনের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। তবে, এই প্রযুক্তির অপব্যবহার, নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং নৈতিক প্রশ্নগুলো আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে উপস্থিত। তাই এই প্রযুক্তিগুলোর সঠিক ব্যবহার, সচেতনতা এবং নীতিমালা প্রণয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তিগুলো আরও উন্নত হবে এবং আমাদের জীবনযাত্রার মান আরও উন্নত করবে।
ইনফো লাগবের নীতিমালা জেনে কমেন্ট করুন । প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়। ;
comment url